সাতক্ষীরা, ০১ মে ২০২০ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): সাতক্ষীরায় যৌতুকের দাবিতে মেহেনাজ পারভিন নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তাকে করোনার রোগী বলে চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা দাসপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর নিহতের স্বামীকে আটক করেছে স্থানীয় জনতা।
মেহেনাজ পারভিন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা দাসপাড়ার রিপন হোসেনের স্ত্রী এবং দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের মুকুল হোসেনের মেয়ে।
দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের সুমন হোসেন জানান, তিন মাস আগে তার বোন মেহেনাজের সঙ্গে সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা গ্রামের দাসপাড়ার শ্রমিক রিপনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ টাকা ও সোনার গহনাসহ এক লাখ টাকার যৌতুক দেওয়া হয়। এর আগেও রিপন বিয়ে করেছিল। পরে আগের স্ত্রীকে তালাক দেয় সে।
রিপন তার বাবা-মায়ের সঙ্গে আগে লক্ষীদাঁড়ি গ্রামে থাকতো। সম্প্রতি তারা ভোমরা দাসপাড়ায় ঘরসহ জমি কিনে বসবাস করতে থাকেন। তাদের সঙ্গে রিপনের বোন রুপা ও তার স্বামী হযরত আলীও থাকেন।
সুমন আরও জানায়, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে মেহেনাজকে নির্যাতন করতো রিপন, তার বোন রুপা, বোনের স্বামী হযরত, শ্বশুর রবিউল, শ্বাশুড়ি খাদিজা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাকে রিপন ফোন করে জানায় যে মেয়েকে নিয়ে না গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে। রাত নয়টার দিকে তার বোনকে আবারও নির্যাতন করে বালিশচাপা দিয়ে মেরে ফেলা হয়। এ সময় বোনের শ্বশুর মোবাইল ফোনে ছোট মাকে খবর দিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যেতে বলে। রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তারা মেহনাজের মৃত্যুর খবর শুনতে পান।
সুমন আরও জানান, রাত ১১টার দিকে লাশ লক্ষীদাড়িতে এনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে প্রচার চালিয়ে মাটি দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন রিপন ও তার পরিবারের সদস্যদের আটক করে একটি ঘরে রাখে। রিপনের চাচা বাবলুর সহযোগিতায় ঘরের জানালা ভেঙে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।
আজ শুক্রবার সকালে ভোমরা দাসপাড়ার বিকাশ দাস, গোপাল দাস ও প্রতিমা রানী দাস জানান, রিপন ভোমরা বন্দরে খুচরা পেঁয়াজ বিক্রি করতো। করোনার কারণে কাজ ছিল না তার। অভাবের তাড়নায় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকতো। এ কারণে মেহেনাজকে মারপিট করা হতো। বৃহস্পতিবার মেহেনাজকে নির্যাতনের এক পর্যায়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা জেনেছেন। মৃতের নাক, কান ও মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল।
তবে আটককৃত রিপন হোসেনের কাছে জানতে চাইলে সে সাংবাদিকদের জানায়, তার স্ত্রীর শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মারা গেছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, মৃতের লাশ উদ্ধারের জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply